রমজানে ৩০ রোজার ফজিলত ও সহীহ হাদিসের দলিল

রমজানে ৩০ রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে প্রত্যেক মুসলমানের জানা দরকার। কারণ হিজরী সন অনুযায়ী রমজান মাস হচ্ছে নবম মাস। আর অন্যান্য মাসের চাইতে এই মাসের গুরুত্ব  ও তাৎপর্য অনেক বেশি। আর এ মাস পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে মন থেকে দোয়া করতে হয়।

রমজানে-৩০-রোজার-ফজিলত
কারণ রমজান মাস যে পেল সে জীবনে শ্রেষ্ঠ উপহার লাভ করল। রমজান মাস প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম একটি মাধ্যম। এজন্য রমজান মাসের রোজার গুরুত্ব এবং ফজিলত সম্পর্কে জানতে হলে অবশ্যই পোষ্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। 

সূচিপত্রঃ রমজানে ৩০ রোজার ফজিলত 

রমজানে ৩০ রোজার ফজিলত দলিল সহ

রমজানের ৩০ রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলতে গেলে বলে শেষ করা সম্ভব নয়। একজন মুসলিম হিসেবে যতটুকু জানলে আপনারা উপকৃত হবেন ততটুকু আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ। রোজা প্রত্যেকটা মুসলিম ব্যক্তির উপর ফরজ করা হয়েছে। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ফরজ তেমনি রোজাও। কিন্তু অনেক মুসলিম ভাই ও বোনেরা এ রমজান মাস কে পেয়েও গুরুত্ব দেয় না। 

আসলে তারা বুঝতে পারল না রমজান মাস কি এবং এটি পরকালে কি উপকারে আসবে? পবিত্র কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারায় বলেছেন "হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো"। রমজান মাসে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

আর জান্নাতের দরজা গুলোকে খুলে দেওয়া হয়। আর এই ৩০ টি রোজা রাখার মাধ্যমে প্রত্যেকের আমলনামায় নেকির পরিমাণ লেখা হয় যা প্রত্যেক মুসলমানকে পরকালে উপহার হিসেবে দেওয়া হবে। যে সকল মুসলমান ৩০ টি রোজা রাখল তার আল্লাহর রহমত পাওয়ার এবং সন্তুষ্টি লাভ করার সুযোগ পেল। আর এই রমজান মাসে শুধু রোজা বা সিয়াম পালন করলেই চলবে না বেশি বেশি ইবাদত এবং কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। 

আরো পড়ুনঃ ইসলামিক নামের অর্থসহ মেয়েদের সুন্দর নাম

পবিত্র রমজান মাসের ফজিলত এজন্য বেশি এই মাসেই আমাদের পবিত্র কুরআনুল কারীম নাযিল হয়েছিল আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর উপর। আর আমরা এই নবীর উম্মত হিসেবে অবশ্যই কুরআনুল কারীম পাঠ করা অত্যাবশ্যক। কুরআন আমাদের সঠিক পথ দেখিয়ে দেয় যা অন্য কোন গ্রন্থে পাওয়া যাবে না। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এই রমজান মাসের ফজিলত গুলো বেশি বেশি পালন করা।

রোজা এমন একটি ইবাদত যা প্রত্যেক মুসলমানের উপরে ফরজ। ফরজ বলতে আমরা বুঝি একান্ত পালনীয়। ফরজ কোন কিছু ছেড়ে দিলে গুনাহ হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে রমজান মাসের রোজা ছাড়া পড়তে পারে কিন্তু পরবর্তীতে সেই রোজা করার সুযোগ রয়েছে। মানুষের বিভিন্ন এবাদতের মধ্যে রোজা এমন একটি ইবাদত যা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভ করার অন্যতম মাধ্যম। 

সহীহ হাদিসের আলোকে ৩০ রোজার গুরুত্ব 

সহি হাদিসের আলোকে ৩০ রোজার গুরুত্ব হচ্ছে রোজা রাখা শুধু এক ধরনের দায়িত্ব হিসেবে পালন হয় তা নয় এটি গুনাহ মাফের ও এক ধরনের সুবর্ণ সুযোগ। রোজা রাখার গুরুত্ব এতটাই বেশি যে একজন রোজাদার ব্যক্তির এবাদত এবং যেকোনো ধরনের ভালো কাজ আল্লাহ খুব পছন্দ করেন। একজন রোজাদার ব্যক্তি যা করবেন তাই তার আমলনামায় নেকি হিসেবে লেখা হবে। 

আর রমজান মাসে সকল মুসলমানের কবরের আজাব থেকে মুক্ত করে দেয়। এই রমজান মাসে যাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন মারা গেছে তাদের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা দান সদকা করা উচিত। রমজান মাসে প্রত্যেক কবরবাসী অপেক্ষা করে তাদের আত্মীয় স্বজনরা বা ছেলে-মেয়ে, বাবা-মা তাদের জন্য কি দোয়া করছে, কি দান সদকা করছে এ নিয়ে অপেক্ষা করে। 

নবী কারীম আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন "রোজাদারদের জন্য জান্নাতে একটি বিশেষ দরজা রয়েছে, যে দরজা দিয়ে মুসলিমরা জানাতে প্রবেশ করবে, সে দরজার নাম 'রাইয়ান'। রমজানের শুরুতে রহমত মধ্যভাগে মাগফেরাত এবং শেষ জাহান্নাম থেকে মুক্তি। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখল তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ রয়েছে।

বুখারী মুসলিমে রাসুল সাঃ বলেছেন "রোজা ঢাল স্বরূপ, যা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে"। ৩০ দিন রোজা রাখার মাধ্যমে একটি মুসলমানের আত্মসংযম, ধৈর্য এবং তাকওয়া অর্জন এর সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়। এবং যারা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেতে চাই এবং জান্নাত লাভ করতে চাই তাদের অবশ্যই সিয়াম রাখতে হবে।

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলসমূহ  

রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল সমূহ জানা থাকলে প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের রমজানের ফজিলত জানা থাকলে এবং সে অনুযায়ী আমল করতে সুবিধা হবে। রমজান মাসের ফজিলত এতটা বেশি যে অন্যান্য দিনের চাইতে রমজান মাসের এক একটি দিন অমূল্য সম্পদের মত। রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমল গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করি। 

রমজানে-৩০-রোজার-ফজিলত
এই রমজান মাস হচ্ছে গুনাহ মাফের মাস। প্রত্যেকের মাঝে কিছু-না-কিছু পাপ রয়েছে। আর পাপ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। তাই এই পাপ মুছে ফেলার জন্য রমজান মাস যথেষ্ট। আর এই রমজান মাসে আকুতি মিনতি করে আল্লাহতালার কাছে মাফ চাইলে তিনি মাফ করে দেন। 

আর এ রমজান মাসে জাহান্নামের দরজা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়। আর জান্নাত লাভ প্রত্যেকটা মুসলমানের লক্ষ্য  হওয়া উচিত। 

আরে কে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো এ রমজান মাসে মহান আল্লাহতালা শয়তানকে বেঁধে রাখে। তাই এই রমজান মাসে মানুষ চাইলেই নিজেকে পাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। শয়তান আমাদের শিরা উপ শিরায় থাকে কিন্তু এ রমজান মাসে আল্লাহ তাকে বন্দী করে রাখেন। 

রমজান মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত গুলোর মধ্যে হচ্ছে লাইলাতুল কদর। লাইলাতুল কদর এমন একটি রাত যে রাতে পবিত্র কোরআন মাজীদ নাযিল হয়েছিল নবীজি (সা:) এর উপর। রমজান মাস যেহেতু কুরআন নাযিলের মাস তাই বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। 

রমজান মাসে নবীজি সালামের সুন্নত পালন করা করা একান্ত পালনীয়। তার দেখানো পথে চলা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য। রমজান মাসে যে সকল সুন্নাত পালন করতেন সেগুলো প্রত্যেক মুসলমানের পালন করা উচিত। 

রমজান মাসে তাকওয়া অর্জন করার এবং নিজেকে খারাপ কাজ থেকে নিয়ন্ত্রণ রাখা, আল্লাহর প্রতি ভয়, ভক্তি, প্রেরণ করা একান্ত কাম্য।

রমজান মাসে বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়তে হবে। রমজান মাসে বেশি বেশি ইস্তেগফার করতেন কারণ যেহেতু এটি গুনাহ মাফের মাস তাই বেশি বেশি আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতে হবে। 

রমজান মাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল তারাবির সালাত। একমাত্র এ রমজান মাসেই এশারের সালাতের পর তারাবির সালাত আদায় করতে হয়। সালাত আদায় করা সুন্নত। তারাবির সালাত নিয়ে অনেকের মতভেদ রয়েছে, কেউ ৮ রাকাত কেউ ২০ রাকাত। নবীজি মাঝে মাঝে ৮ মাঝে মাঝে বেশ রাকাত তারাবির সালাত আদায় করতেন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো দরুদ শরীফ পাঠ করা। দরুদ শরীফ পাঠ করলে নবীজির সুপারিশ পাওয়া যায়। এটা সকলেই জানি নবীজির সুপারিশ ছাড়া কেউ জানাতে প্রবেশ করবে না তাই এই রমজান মাসে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। 

যারা রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া করবে তাদের দোয়া আল্লাহ তায়ালা কবুল করবেন বিশেষ করে রোজাদার ব্যক্তির দোয়া কখনোই আল্লাহ ফিরিয়ে দেন না। 

রমজান মাসের আরো কিছু আমল আছে তার মধ্যে বিশেষ আরেকটি আমল হচ্ছে তাহাজ্জুদ সালাত। বেশিরভাগ মুসলিম তাহাজ্জুদ সালাতের ফজিলত সম্পর্কে জানেনা। আর এই রমজান মাসে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। কারণ সেহরি খেতে ওঠার ১০-১৫ মিনিট আগে উঠে তাদের সালাত আদায় করা যায়। দুই রাকাত তাহাজ্জুদ সালাত থেকে শুরু করা যায়।

শুকরিয়া আদায় করা রমজান মাসের আরেকটি নেক আমল। যারা বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে তারা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পাবে। যারা রমজান মাস পেল তারা যেন বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করে, আগামী রমজান পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাই।

রমজান মাসে যে যত বেশি দান করবে তার আমল নামায় তত বেশি লেখা হবে। রমজান মাসে যে একজন রোজাদারকে খাওয়ালো সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করল। বেশি বেশি দান করা এ রমজান মাসে একটি অন্য তম গুরুত্বপূর্ণ আমল। 

রমজান মাসে যারা দিনের দাওয়াত দিতে চান তারা পূর্ণ মর্যাদা লাভ করবেন। আমাদের নবীজি এই রমজান মাসে বেশি বেশি ইসলামের দাওয়াত দিতেন। তাই প্রত্যেক মুসলমানের এই রমজান মাসে ইসলামের দাওয়াত এবং কোরআনের বাণী পৌঁছানোর চেষ্টা করা উচিত।

রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন

রমজান মাসে প্রত্যেকটি মমিন মুসলমান ৩০ টি রোজা পালনের দ্বারা তাকওয়া অর্জন করতে পারে। কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন "হে ঈমান তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো"। এই আয়াতের দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় রোজা পালনের মূল উদ্দেশ্য হল তাকওয়া অর্জন করা। 

তাকওয়া অর্জনের মাধ্যম গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো। 

আল্লাহর প্রতি ভয় ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়ঃ রোজা রাখার মাধ্যমে প্রত্যেক মানুষের ভিতরে আল্লাহর প্রতি ভয় সৃষ্টি হয়। কারণ রোজা রাখার মাধ্যমে অনেক খারাপ লোকজন খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করে। বিশেষ করে রোজা রাখার ফলে মানুষ বুঝতে পারে আল্লাহ তাকে দেখছে সেজন্য সে নিজেকে খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত রাখে। এই আল্লাহর প্রতি ভয় হচ্ছে তাকওয়া। 

নিজের ইচ্ছাশক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি পায়ঃ মজান মাসে রোজা রাখার ফলে মানুষ তার খারাপ চিন্তা ভাবনা গুলো থেকে বিরত থাকে এবং নিজের মনকে আত্মনিয়ন্ত্রণ করে। কারণ মানুষ জানে রোজা রাখলে সোয়াব রয়েছে। তাই ইচ্ছা শক্তি থাকা সত্ত্বেও মানুষ রোজা রেখে পানাহার করা থেকে বিরত থাকে।
গুনাহ থেকে বাঁচার অভ্যাসঃ রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে। কারণ অনেকে আছে যারা নেশা দ্রব্য জিনিস পান করেন বা খেয়ে থাকেন, আবার অনেকে মিথ্যা কথা বলে, খারাপ কাজ করে, আর ও বিভিন্ন অন্যায় করে তারা এই রোজা রাখার ফলে তাদের এই খারাপ অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। 

ধৈর্যশীল ও সহনশীল বৃদ্ধিঃ কোন ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তি রোজা রাখার ফলে তার ধৈর্যশীল এবং সহনশীলতার প্রতিরূপ ফুটিয়ে তুলে। কারণ ধৈর্যশীল বলেই সে তার তৃষ্ণা, ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও খায় না এটা তাকওয়ার মধ্যে পড়ে। 

আল্লাহর অনুগ্রহ বোঝা যায়ঃ রোজা রাখার ফলে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যায় কারণ সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারি করলে শরীরে কোন ধরনের ক্ষতি হয় না বরং নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হয় যে আল্লাহর সন্তুষ্ট আছেন করতে পেরেছি। 

ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বাড়েঃ রমজান মাসে অনেক মুসলমান যারা কোনদিন সালাত আদায় করেন না তারাও সেই রমজান মাসে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে থাকেন। বিশেষ করে এই রমজান মাসে বিভিন্ন ধরনের এবাদতের প্রতি আগ্রহ বাড়ে যেমন কোরআন তেলাওয়াত, নামাজ পড়া, জিকির করা, দান এর মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব।

দান এবং সদকা বৃদ্ধি পায়ঃ  এ রমজান মাসে অনেক টাকা পয়সা ওয়ালা লোকজন গরিবদের দান করে থাকেন। আর এর দাম সদকা হাশরের ময়দানে ১০ গুণ বৃদ্ধি পাবে। রমজান মাসে যত বেশি দান করা যায় তত বেশি নেকি লাভ করা যায়।

রমজানের প্রথম ১০ দিনের ফজিলত 

রমজান মাসের ফজিলত অনেক। রমজান মাসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে প্রথম ১০ দিন কে রহমতের দশক দ্বিতীয় দশ দিন কে মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশজনকে নাজাতের দশক বলা হয়েছে। চলুন প্রথম দশ দিনের ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। 

রমজান মাস শুরু হয় রহমত দিয়ে। আর প্রথম ১০ দিনে আল্লাহর বিশেষ রহমত রয়েছে। রমজান মাস যেহেতু কুরআন নাযিলের মাস তাই বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করা উচিত। আর পবিত্র কোরআন মাজীদ ৩০ পারায় বিভক্ত। তাই এই প্রথম ১০ দিনে মুসলমানের উচিত দশ পারা খতম করা এছাড়া আরো অন্যান্য জিকির এবং ইবাদত করা। 

এই দশদিনে অনেক বেশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং নিজের পাপের জন্য নত হয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে তওবা করে দোয়া করতে হবে যেন এই রমজান মাসে সকল পাপ ক্ষমা করে দেন। বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া। নিজের সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে দান করা।

রমজানের দ্বিতীয় দশকের ফজিলত

রমজান মাসের দ্বিতীয় দশ দিনকে বলা হয় মাগফেরাতের দশক অর্থাৎ ক্ষমার দশক। এই ১০ দিন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি গুনাহ মাপের জন্য দোয়া করতে হবে এবং চাইতে হবে। আল্লাহ অবশ্যই তওবাকারীকে পছন্দ করেন তাই এই মাসে বেশি বেশি তওবা ও শয়তানের ওয়াশ ওয়াসা থেকে আল্লাহর কাছে রক্ষা চাইতে হবে। 

দ্বিতীয় দশকে কোরআনের আরও ১০ পারা অর্থসহ পড়ার চেষ্টা করতে হবে। ১১-২০ পারা পর্যন্ত খতম করতে পারলে আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি অনেক রহমত দিবেন এবং গুনাহ মাফ করে দেবেন। এবং কদরের রাত পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে দ্বিতীয় দশক থেকেই। এছাড়া বেশি বেশি তওবা, ইস্তেগফার, নফল নামাজ, গরিব দুঃখীদের দান, কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে।

রমজানের তৃতীয় দশকের ফজিলত 

রমজান মাসের এক একটি দিন অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক ফজিলত পূর্ণ। আর রমজান মাসের ৩ ভাগের মধ্যে এই তৃতীয় দশক সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। রমজানের শেষ দশকের ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না কারণ এই শেষ দশকে বলা হয় নাজাতের দশক অর্থাৎ যার নাম থেকে মুক্তি লাভের দর্শক। এ রমজান মাসের তৃতীয দশক বেশি গুরুত্বপূর্ণ এর কারণ হচ্ছে লাইলাতুল কদরের তালাশ। 

এই তৃতীয় দশকে লাইলাতুল কদরের তালাশ করা প্রত্যেকটি মুসলমানের একান্ত দায়িত্ব এবং কর্তব্য। নবীজি সাল্লাহু সাল্লাম এর তৃতীয় দশকে প্রত্যেক মুসলিমকে আল্লাহ লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলেছেন বিজড়ের রাতগুলোতে যেমন (২১,২৩,২৫,২৭,২৯) এই রাতগুলোতে। কারণ এই বেজড়ের কোন একটি রাতে লাইলাতুল কদর হয়েছিল এবং সেই রাতেই কুরআন নাজিল হয়।

কারণ এই অন আল্লাহ তাআলা বলেছেন "লাইলাতুল কদর হচ্ছে ১০০০ মাসের চেয়ে উত্তম"। যেহেতু রমজানের শেষ তো সবটাই বেশি বেশি তোবা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ এবং কবরবাসীদের জন্য দোয়া করতে হবে। এই লাইলাতুল কদরের রাতে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ার ও কোরআন তেলাওয়াত করা নির্দেশ দিয়েছেন। 

এছাড়া এই শেষ দশকে করা নির্দেশ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি মসজিদে ইত্তেকাফ করে তিনি অনেক সওয়াবের অধিকারী হন। এবং এই শেষ দশকে বেশি বেশি দান সদকা করা উত্তম।

রমজানের রোজার মূল উদ্দেশ্য

রমজানের ৩০ রোজার মূল উদ্দেশ্য বলতে আমরা বুঝি তাকওয়া অর্জন, আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য ও সংযম আল্লাহর ভীতি ইত্যাদি। রমজানে ৩০ রোজার ফজিলত যেমন রয়েছে সহীহ হাদিসের আলোকে তেমনি ৩০ রোজার উদ্দেশ্য রয়েছে। আল্লাহ প্রত্যেকটি সৃষ্টির উদ্দেশ্য রয়েছে। আর এই রোজার দ্বারা আল্লাহ তার প্রত্যেক বান্দার ধৈর্য, আত্মশুদ্ধির পরীক্ষা নেন। 

এইজন্য এই রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা শয়তানকে বেঁধে রেখেছেন তার বান্দাদেরকে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য। এ রমজান মাসের না খেয়ে থেকে রোজা রাখা শুধু রোজার মূল উদ্দেশ্য নয়। এই মাস হচ্ছে নিজেকে পরিশুদ্ধির মাস। এ রোজার দ্বারা মানুষ ক্ষুধার্ত ও দুস্থ মানুষের কষ্ট উপলব্ধি করতে শিখে। হে রোজার দ্বারা মানুষ তার ইচ্ছাশক্তি নিয়ন্ত্রণ করার শক্তি লাভ করে। 

রমজানে-৩০-রোজার-ফজিলত
এছাড়া নিজেকে সংশোধন করার এবং নিজের পাপ গুলোকে মোচন করার এই একটি সুবর্ণ সুযোগ রমজান মাস। আল্লাহ নিজেই এই সুযোগ করে দিয়েছেন তার প্রত্যেকটি মুমিন বান্দা-বান্দির জন্য। আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা এবং অনুগত করে রমজান মাসে প্রত্যেকটা মুসলমান ইফতার সামনে নিয়ে বসে থাকে। পেটে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের আশায় পানাহার থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। 

এ রমজান মাস মানুষকে দুনিয়ার মায়া-মহল থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে এবং আখেরাতের চিন্তা করতে শেখায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাম বলেছেন "রোজাদারদের জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে একটি ইফতারের সময় অনেকে তারাবির সঙ্গে সাক্ষাতের সময়"। এছাড়া এই রমজান মাসে কোরআন মাজীদ তেলাওয়াত করলে একটি হরফের জন্য দশটি নেকি হয়। তাই প্রত্যেকের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কোরআন আমাদের তেলাওয়াত করা।

রমজানে ৩০ রোজার ফজিলত (FAQ )প্রশ্ন উত্তর

প্রশ্ন: কাদের উপর রোজা ফরজ? 

উত্তর: প্রাপ্ত বয়স্ক প্রত্যেক মুসলিম মানুষের উপর রোজা ফরজ। 

প্রশ্ন: রমজান মাস কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং রহমতের মাস? 

উত্তর: এ মাসে পবিত্র কুরআন মাজিদ নাযিল হয়েছে এবং আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য সব লাভের অনেক পথ খুলে দেন ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেন।

প্রশ্ন: পবিত্র মাহে রমজানের মূল উদ্দেশ্য কি?

উত্তর: মাহে রমজানের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে তাকওয়া অর্জন করা এবং আত্মশুদ্ধি লাভ করা।

প্রশ্ন: রমজানের দোয়া কবুলের বিশেষ সময় কখন? 

উত্তর: রমজানের দোয়া কবুলের বিশেষ সময় হচ্ছে ইফতারের সময়। ইফতারির আগে সামনে খাবার নিয়ে আল্লাহর কাছে হাত তুলে দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন। 

প্রশ্ন: ইফতার দেরি না করার ফজিলত কি?

উত্তর: ইফতার বিলম্ব না করা রাসূলুল্লাহ (সা:) সুন্নত।

প্রশ্ন: লাইলাতুল কদরের ফজিলত কি? 

উত্তর: লাইলাতুল কদর রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় কোন একটি রাত। এটি হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। 

প্রশ্ন: সদকাতুল ফিতর দেওয়া কেন জরুরী? 

উত্তর: সদকাতুল ফিতর যাওয়া জরুরী কারণ এটি গরিবদের হক আদায় করা হয়।

প্রশ্ন: রমজানের শিক্ষা কিভাবে সারা বছর কাজে লাগানো উচিত? 

উত্তর: তাকওয়া ও সংযম বজায় রেখে।

শেষ কথাঃ রমজানে ৩০ রোজার ফজিলত

রমজান মাস প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য একটি কাঙ্খিত মাস যে মাস মাসের তুলনায় অনেক বরকতময়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন "আদম সন্তানের সকল আমল তার নিজের জন্য, কিন্তু রোজা আমার জন্য এবং আমি নিজে এর প্রতিদান দেব"। রোজা ইসলামের তৃতীয় একটি স্তম্ভ। 

পরিশেষে বলা যায় যে রমজান মাস প্রত্যেক মুসলমানকে খুবই আত্মসমরামি এবং ধৈর্যশীল বানায়। আর এ রমজান মাস পাওয়ার জন্য শাবান মাসেই আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। এই রমজান মাসে যারা নিজের গুনাগুলোকে মাফ করাতে ভালো না তারা কিছুই পেল না তাই বেশি বেশি আল্লাহর কাছে জিকির এবাদত এবং দোয়া করতে হবে। পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে পরিচিতদের সাথে শেয়ার করবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টেকিসময় ডট কম ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url