চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায়
চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায় জানা না থাকলে আজকের পোস্ট থেকে আপনারা চিনা হাঁস পালনের গুরুত্ব, বৈশিষ্ট্য এবং উপযুক্ত পরিবেশ, খাদ্য, ডিম উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ এবং প্রয়োজনীয় পানি সংস্থান করার উপায় আলোচনা করব।
অনেকেই নতুন করে হাঁসের খামার শুরু করতে চান কিন্তু সঠিক গাইডলাইন থাকার অভাবে বুঝতে পারছেন না কিভাবে শুরু করবেন সেই জন্য আজকে চিনা হাঁস পালন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন যদি পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েন।সূচিপত্রঃ চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায়
- চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায়
- চিনা হাঁস পালনের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা
- চীনা হাঁসের বাচ্চা পালন পদ্ধতি
- হাঁসের বাচ্চা কত দিনে ডিম থেকে ফুটে
- চিনা হাঁস কত দিনে ডিম দেয়
- চীনা হাঁসের খাদ্য তালিকা
- চিনা হাঁস পালনের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান
- হাঁসের রোগ প্রতিরোধের উপায়
- চীনা হাঁসের ভ্যাকসিন ও ঔষধ প্রদানের পদ্ধতি
- চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায় সম্পর্কে (FAQ)প্রশ্ন উত্তর
- শেষ কথাঃ চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায়
চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায়
চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায় এর মধ্যে যে সকল বিষয়গুলো জানতে হবে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় হচ্ছে এই হাঁস পালনের গুরুত্ব এবং ব্যবসার লাভজনক হওয়ার উপায়, এই হাঁসের বাচ্চা এবং বৈশিষ্ট্য, হাঁস পালনের উপযুক্ত পরিবেশ, খাদ্য ও পানীয় ব্যবস্থা, খামারের অবস্থা কেমন হওয়া উচিত, নিরাপদ খাঁচা তৈরির সহজ উপায় ও ব্যয়বহুল উপায়।
অনেকে নিজের ভাগ্যকে পরিবর্তন করার জন্য হাঁস, মুরগি পালন কে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তবে নিজেকে একজন সঠিক উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বলে মনে করা যায়। ইচ্ছা শক্তি, সিদ্ধান্ত এবং সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া কখনোই জীবনে সফলতা সম্ভব নয়। তাই যারা চিনা হাঁস পালনের সিদ্ধান্ত হতে পারে আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত।
এ পদ্ধতিকে নিজের ব্যবসা হিসেবে গড়ে তুলতে চান তাদের জন্য কিছু দিক নির্দেশনা এবং এবং হাঁস পালনের সঠিক পদ্ধতি উপায় আপনাদের সাথে শেয়ার করছি এবং এ থেকে আপনারা দিকনির্দেশনা নিতে পারেন ব্যবসার ক্ষেত্রে। কোন কাজেই সহজ নয় কিন্তু নিজেকে সহজ করে নিতে হয় তাই যারা চিনা হাঁস পালনের চিন্তাভাবনা করছেন তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মনে করি।
চিনা হাঁস পালনের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা
চিনা হাসপাতালের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা বলতে গেলে একটি লাভজনক ব্যবসা। চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায় জানার জন্য ছঅনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কারণ গ্রামীন পরিবেশে এটি পালন করে খুব সহজেই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। বর্তমানে এই হাঁসের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের জলবায়ু ও ভৌগলিক পরিবেশ চিনা হাঁস পালনের জন্য উপযুক্ত বলা যেতে পারে।
এই হাসকে খুব বেশি খেতে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। জলজ পরিবেশে এই হাঁস বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে। এছাড়া এই হাঁস পুকুর, নদী, খাল, বিল ইত্যাদিতে খুব সহজেই পালন করা সম্ভব। এই হাঁস অন্যান্য হাঁসের গোশতের তুলনায় খেতে সুস্বাদু। স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাজারে এই হাঁসের চাহিদা রয়েছে। কম খরচে এই হাঁস পালন করা যায় ফলে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।
এছাড়া বর্তমানে যারা কৃষি খামার করছে তাদেরকে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, ঋণের ব্যবস্থা এবং অনুদান, নতুন উদ্যোক্তাদের সাহায্য করে থাকছে। বেকার যুবক-যুবতীরা এ ধরনের হাঁস-মুরগি পালন এর খামার করে খুব সহজে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারছে। বেকারদের ভবিষ্যৎ এবং সাফল্য এ ধরনের ক্ষুদ্র কৃষিকাজ করেও পরিবর্তন করা সম্ভব।চিনা হাঁসের বাচ্চা লালন পালন পদ্ধতি
সঠিকভাবে চিনা হাঁসের বাচ্চা লালন-পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানলে খুব সহজেই এবং গ্রামীণ পরিবেশে এ ধরনের হাঁসের বাচ্চা পালন করা সম্ভব। বাচ্চার জন্মের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তাদের ভালোভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। বাচ্চার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং উপযুক্ত খাদ্য আবাসনের ব্যবস্থাপনার প্রতি নজর দেয়া জরুরী।
জন্মের পর প্রথম তিন সপ্তাহ বাচ্চাকে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা এবং তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় রাখা। তাদের বাসস্থান অবশ্যই শুকনো হতে হবে। এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার দিতে হবে এবং পরিষ্কার পানি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রোটিন যুক্ত স্টার্টার ফিড খাওয়ালে তাদের বৃদ্ধি দ্রুত হওয়ার নিশ্চয়তা থাকে।
হাঁসের বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি নিউ নিউ ক্যাসেল ডিজিজ বা ডাক প্লেগ বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হতে পারে। তাই রোগ প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত এদের থাকার জায়গায় স্প্রে করতে হবে। সঠিক ব্যবস্থা এবং সুষম খাদ্য দিলে এ ধরনের হাঁসের বাচ্চা খুব সহজেই বেড়ে ওঠে।
হাঁসের বাচ্চা কত দিনে ডিম থেকে ফুটে
হাঁসের বাচ্চা কত দিনে ডিম থেকে ফুটে জানা থাকলে হাঁসের বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। হাঁস পালন করতে চান তাদের এই সকল ব্যাপারে জানা জরুরী। সাধারণত ২৮ থেকে ২৩ দিনের মধ্যেই ডিম থেকে হাঁসের বাচ্চা ফোটে। তবে অনেক ক্ষেত্রে ২৮ থেকে ৩২ দিন লাগতে পারে। বাচ্চা ফুটের ক্ষেত্রে কিছু উপযুক্ত সত্য রয়েছে। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।
- যদি প্রাকৃতিক ভাবে বাচ্চা ফোটানো হয় অর্থাৎ হাঁস ডিমের তা দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয় তাহলে ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
- এছাড়াও আছে বিকল্প আরও পদ্ধতি তার মধ্যে ইউনিকোড ব্যবহার করে ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে ৩৭. ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়।
- ইনকিউবেসনের জন্য আদর্শ আদ্রতা ৫০ থেকে ৬০%। ডিম ফোটার হার ভালো হওয়ার জন্য শেষের ৩ দিনে আদ্রতা ৭০% বাড়িয়ে দেওয়া হয়।
- ইনকিউবেটরে মাঝে মাঝে ডিম তিন চারবার উল্টে দেওয়া হয়, বাচ্চার সঠিক ভ্রূণ উৎপাদনের জন্য। ইনকিউবেটরে সঠিক ব্যবস্থা রাখা উচিত।
চিনা হাঁস কত দিনে ডিম দেয় ও দাম কত
চিনা হাঁস কত দিনে ডিম দেয় যারা এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন তারা আজকে সকল ধরনের প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ। সাধারণত যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চায় তারা এ ধরনের চিন্তাভাবনা করে থাকেন। চিনা হাঁস পালন যেহেতু সহজ তাই অনেকেই এই হাঁস পালনের উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। যদি সঠিক খাদ্য এবং পরিচর্যা পাই তাহলে চিনা হাঁস মাসের মধ্যে ডিম পাড়া শুরু করে।
কিন্তু একসাথে যদি অনেকগুলো হাঁস পালন করা হয় তাহলে খাদ্যের হয়তো ঘাটতি পড়তে পারে তাই ডিম পাড়ার সময় হতে পারে যেমন যেখানে ৫ থেকে ৬ মাসে ডিম দিত সেখানে ৬ থেকে ৭ মাস লাগতে পারে। বেশি ডিম উৎপাদনের জন্য চীনা হাঁসকে বিশুদ্ধ পানি, সবুজ ঘাস, মিনারেল যুক্ত খাবার, ক্যালসিয়াম খাওয়াতে হবে। বছরে একটি প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ চিনা হাঁস ১৮০ থেকে ২০০ টি ডিম দিতে সক্ষম।
সাধারণত শীতকাল এবং বসন্তকালে ডিম বেশি দিয়ে থাকে। অতিরিক্ত তাপ বা গ্রীষ্মকালে ডিমের পরিমাণ কমে যায়। এই হাঁস একটা না ৮ থেকে ১০ মাস ডিম দিতে পারে। এবং বছরে দুই তিন মাস ডিম দেওয়া বন্ধ রাখতে পারে এর খাদ্য এবং পরিচর্যার উপর নির্ভর করে। এর ডিমের রং সাদা হালকা সবুজাভ ও নীল রঙের হয়ে থাকে। চীনা হাঁসের ডিমের হালি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। স্থান ভেদে কম বেশি হতে পারে।
চীনা হাঁসের খাদ্য তালিকা
চীনা হাঁসের খাদ্য তালিকার মধ্যে অবশ্যই প্রোটিন শর্করা ভিটামিন খনিজ উপাদান থাকতে হবে। কারণ দ্রুত বৃদ্ধি এবং ডিম উৎপাদনের জন্য এ ধরনের খাদ্য দেয়া জরুরী। পর্যাপ্ত পানি সুষম খাদ্য প্রাকৃতিক কিছু উপাদান তাদের খাদ্য হিসেবে রাখা উচিত। নিচে চীনা হাসির খাদ্য তালিকা তুলে ধরা হলো।
১ থেকে ৪ সপ্তাহ বয়স চীনা হাঁসের বাচ্চাকে ১৮ থেকে ২০ পার্সেন্ট প্রোটিনযুক্ত স্টার্টার খাওয়াতে হবে।
- ভুট্টার গুড়া-৪৫%
- চালের গুড়া-৪০%
- মাছের গুড়া-১০%
- গমের ভুষি-১৫%
- সয়াবিন মিল-২০%
- ভিটামিন ও মিনারেল-৫%
৫-৮ সপ্তাহ যেসকল হাঁসের বয়স তাদেরকে ১৬ থেকে ১৮% প্রোটিন যুক্ত গ্রোয়ার ফিড খাওয়াতে হবে।
- ভুট্টার গুড়া-৪০%
- চালের গুড়া-২৫%
- মাছের গুড়া-১০%
- গমের ভুসি-৪০%
- সয়াবিন মিল-১৫%
- ভিটামিন ও খনিজ-৫%
উপরোক্ত খাবারের পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি এবং জলজ উদ্ভিদ খাওয়াতে হবে এবং পর্যাপ্ত চলাফেরা করার জায়গা রাখতে হবে এবং পরিষ্কার পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
৯ থেকে ২০ সপ্তাহ যে সকল হাঁসের বয়স তাদের খাদ্য ১৫ থেকে ১৬% প্রোটিনযুক্ত ফিট খাওয়াতে হবে।
- ভুট্টা বা গমের গুঁড়া-৪০%
- চালের গুড়া-৩০%
- মাছের গোড়া-১০%
- সয়াবিন মিল-১০%
- ক্যালসিয়াম ও খনিজ-৫%
এর সাথে সবুজ শাকসবজি যেমন পালং শাক, পুঁই শাক, লেটুস শাক এবং সবুজ ঘাস খাওয়াতে হবে।
ডিম পাড়া হাঁসের খাদ্য তালিকা একটু ভিন্ন হতে হবে, বিশেষ করে যে সকল চিনা হাঁসের বয়স ২০ সপ্তাহের বেশি। তাদের ১৬-১৮% প্রোটিন যুক্ত খাবার দিতে হবে।
- ভুট্টা-৩৫%
- গমের ভুসি-২০%
- সয়াবিন মিল-১৫%
- মাছের গোড়া-১০%
- ক্যালসিয়াম (চুনের গুড়া, শামুকের খোলসের গুঁড়া)-১০%
- ভিটামিন ও খনিজ-৫%
ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার দিলে হাঁসের ডিমের খোসা শক্ত হয়। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খাওয়ানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে।
চীনা হাঁস পালনের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান
চিনা হাঁস পালনের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান থাকাও তাদের জরুরী। বাসস্থান হতে হবে খোলামেলা কারণ যদি কমসংখ্যক হাঁস থাকে তাহলে হাঁসের সংখ্যা অনুযায়ী বাসস্থানের জন্য জায়গা নির্বাচন করতে হবে। হাস পানিতে থাকতে বেশি পছন্দ করে তাই জলাশয় কিংবা পুকুরের আশেপাশে এর বাসস্থান তৈরি করলে ভালো হয়। হাঁসের থাকার জন্য ৩-৪ বর্গফুট জায়গা হলে ভালো হয়।
যারা খামারি ব্যবসা করেন তাদের হাঁসের জায়গা ভালোভাবে বেড়া কিংবা হিংস্র পশু পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শক্ত এবং মজবুত করে তৈরি করতে হবে। একসাথে মেঝে স্যাঁতসেঁতে ও বৃষ্টির দিনে পানি জমে থাকে এ ধরনের জায়গা নির্বাচন করা উচিত নয়। হাঁসের বাসস্থানের মেঝের উপর কাঠের গুড়া কিংবা শুকনো খড় বিছিয়ে দিলে ভালো হয়।
রাতে হাঁসের বাসস্থানের পর্যাপ্ত আলো রাখার ব্যবস্থা করতে হবে এবং বায়ু চলাফেরার ব্যবস্থা রাখতে হবে। গরম পরিবেশে হাঁসের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা এবং রোগ দেখা দিতে পারে। নিয়মিত হাঁসের বাসস্থান পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে হবে।
হাঁসের রোগ প্রতিরোধের উপায়
চিনা হাঁসের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। হাঁস পালনের জন্য সবচাইতে বেশি মোকাবেলা করতে হয় রোগ প্রতিরোধ করার জন্য। কারণ এর জন্য অনেক খামারিদের আর্থিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হাঁস বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে যেমন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট জনিত।
এর মধ্যে নিউ ক্যাসেল, কলেরা, হাঁসের প্লেগ সংক্রমণ গুলো অন্যতম। সময় মত সঠিক ব্যবস্থা না নিলে এ সকল রোগ দ্রুত ছড়িয়ে হাঁসের মৃত্যু হতে পারে। হাঁসের ভাইরাস জনিত রোগের মধ্যে প্লেগ এবং নিউ ক্যাসেল বেশি হয় এ ধরনের রোগ হলে হাঁস অনেক শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকে। নিউ ক্যাসেল রোগে আক্রান্ত হলে হাঁসের ঘাড় পেছন দিকে বেঁকে যায়।
হাঁস কলেরা এবং সালমোনেলা রোগে আক্রান্ত হলে হাঁসের পাতলা পায়খানা হয়। এবং দুর্বল হয়ে পড়ে ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে। পরিষ্কার এবং খাবারের মাধ্যমে হয়ে থাকে জীবাণুযুক্ত খাবার খেলে এ ধরনের রোগ হয়। তাই হাঁসের খাবার সব সময় পরিষ্কার এবং জীবাণু মুক্ত হওয়া উচিত। খামারে নতুন হাঁস যুক্ত করার আগে রোগাক্রান্ত হাঁস গুলোকে আলাদা বা কোয়ারেন্টাইনে রাখা দরকার।চীনা হাঁসের ভ্যাকসিন ও ওষুধ প্রদানের পদ্ধতি
চিনা হাঁসের ভ্যাকসিন ওষুধ প্রদানের পদ্ধতি জানা থাকলে খুব সহজেই রোগাক্রান্ত এবং দুর্বল হাঁসকে চিহ্নিত করে ওষুধ এবং ভ্যাকসিন প্রদান করা যাবে। সুস্থ এবং অসুস্থ সকল হাঁসকে প্রধান করা যায়। ঔষধ রোগের ভিত্তিতে খাওয়ানো হয়।
ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় ও পরিমান উল্লেখ করা হলো
বয়স (দিন) | ভ্যাকসিনের নাম | পরিমাণ | প্রয়োগ পদ্ধতি |
---|---|---|---|
১-৩ দিন | ডাক প্লেগ (Duck Plague) | ১ ডোজ | ড্রপ (চোখে/নাকে) |
৭-১০ দিন | নিউক্যাসল ডিজিজ (ND) | ১ ডোজ | পানির সাথে মিশিয়ে |
১৫-২০ দিন | এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (AI) | ১ ডোজ | পাখার নিচে চামড়ার নিচে পুশ |
৩০-৩৫ দিন | এন্টিরোটক্সেমিয়া (Clostridium) | ১ ডোজ | মাংসে (Intramuscular) |
৪৫-৫০ দিন | ফাউল কলেরা (Fowl Cholera) | ১ ডোজ | চামড়ার নিচে (Subcutaneous) |
৬০-৭০ দিন | রিপিটার ডুক প্লেগ (Booster) | ১ ডোজ | মাংসে (Intramuscular) |
হাঁসের বিভিন্ন রোগের ওষুধ ও খাওয়ানোর নিয়ম নিচে তালিকা দেয়া হলো
রোগের নাম | উপসর্গ | ওষুধের নাম | ডোজ ও প্রয়োগ পদ্ধতি |
---|---|---|---|
ডাক প্লেগ | ডাক প্লেগ (Duck Plague) | পায়ের দুর্বলতা, ডানা ঝুলে যাওয়া | নির্ধারিত ডোজ, ইনজেকশন |
নিউক্যাসল ডিজিজ | নিউক্যাসল ডিজিজ (ND) | ঘাড় বাঁকা, খিঁচুনি, ডিম কমে যাওয়া | পানির সাথে মিশিয়ে |
ফাউল কলেরা | এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা (AI) | হাঁস খেতে চায় না, শরীর গরম | পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো |
রানিক্ষেত | এন্টিরোটক্সেমিয়া (Clostridium) | পাখা কাঁপা, মুখ দিয়ে লালা পড়া | পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো |
সালমোনেলা | ফাউল কলেরা (Fowl Cholera) | ডায়রিয়া, দুর্বলতা | পানির সাথে ১ গ্রাম/লিটার |
কৃমি সংক্রমণ | রিপিটার ডুক প্লেগ (Booster) | ক্ষুধামন্দা, ওজন কমে যাওয়া | ১ ট্যাবলেট/৫ কেজি ওজন |
চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায় সম্পর্কে (FAQ) প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন: চীনা হাঁসের বৈশিষ্ট্য কি?
উত্তর: চিনা হাঁস দেখতে লম্বাটে, কালো রঙের, মাথায় লাল টোপর থাকে গলা লম্বা।
প্রশ্ন: চিনা হাঁসকে দিনের কতবার খাবার খাওয়ানো উচিত?
উত্তর: চিনা হাঁসকে দিনে দুই তিন বার খাওয়ানো উচিত।
প্রশ্ন: চীনা হাঁসের ওজন কত হতে পারে?
উত্তর: চিনা হাঁসের ওজন ৩-৫ কেজি হতে পারে।
প্রশ্ন: চিনা হাঁস কি লাভজনক?
উত্তর: হ্যাঁ, সঠিক পালন এবং ব্যবস্থাপনা লাভজনক হতে পারে।
প্রশ্ন: চিনা হাঁসের মাংসের দাম কত?
উত্তর: চীনা হাঁসের মাংসের দাম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা প্রতি কেজি। তবে স্থান/জায়গা ভেদে দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: চিনা হাস কত দিনে বিক্রি উপযোগী হয়?
উত্তর: চিনা হাঁস সাধারণত ৫-৬ মাসে বিক্রয় উপযোগী হয়।
প্রশ্ন: চীনা হাঁসের মাংস খেতে কেমন?
উত্তর: চিনা হাঁসের মাংস খেতে নরম সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।
প্রশ্ন: চিনা হাস কেন পালন করা হয়?
উত্তর: ডিম, মাংস উৎপাদন এবং কৃষি খামার ব্যবসা করার জন্য।
শেষ কথাঃ চিনা হাঁস পালন পদ্ধতির সহজ উপায়
উপরোক্ত সকল আলোচনা শেষে বলা যায় যারা নতুন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চান তারা কি শিক্ষা আমার ব্যবস্থা করতে পারেন। এ কৃষি খামার ব্যবস্থার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি পালা যায় এর মধ্যে চিনা হাঁস একটি অন্যতম। চিনা হাঁস পালনের সুবিধা রয়েছে কারণ এদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি এবং এরা প্রাকৃতিক সব পরিবেশেই পালন করা সম্ভব। চিনা হাঁস পালন পদ্ধতি যদি আপনাদের উপকার এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার পরিচিতদের সাথে পোস্টটি শেয়ার করুন।
টেকিসময় ডট কম ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url