তিসির তেলের ব্যবহার ২৩ উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত
সুচিপত্রঃ তিসির তেলের ব্যবহার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ
- তিসির তেলের ব্যবহার
- খাবার হিসেবে তিসির তেল কিভাবে ব্যবহার করা হয়
- চুলের যত্নে তিসির তেলের ব্যবহার
- ত্বকের যত্নে তিসির তেলের ব্যবহার
- শরীরে ম্যাসাজে তিসির তেলের ব্যবহার
- তিসির তেলের উপকারিতা
- তিসির তেল তৈরি পদ্ধতি
- তিসির তেলে থাকা পুষ্টি উপাদান সমূহ
- শেষ কথাঃ তিসির তেলের ব্যবহার
তিসির তেলের ব্যবহার
তিসির তেলের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে চলুন তিসির তেলের বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে যা অনেকের ধারণার বাইরে। বর্তমানে তিসির তেলের ব্যবহার অনেকটাই কমে গেছে। আজকে তিসির তেল কি কি কাজে ব্যবহার করা হয় সে সম্পর্কে আপনাদের বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করব।
- ত্বকের যত্নে তিসির তেলের ব্যবহার
- চুলের যত্নে তিসির তেলের ব্যবহার
- বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ব্যবহার
- আসবাবপত্র চকচকে করার কাজে
- বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে
- বিভিন্ন ফেসপ্যাক এর সাথে ব্যবহার
- শরীরের যত্নে ব্যবহার
- গবাদি পশুর খাবার হিসেবে
- কাঠের জিনিসপত্র উজ্জ্বল চকচকে করতে ব্যবহার
- পেইন্টিং এর কাজে ব্যবহার
- বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে অর্থাৎ ক্যাপসুল হিসেবে ব্যবহার।
খাবার হিসেবে তিসির তেল কিভাবে ব্যবহার
খাবার হিসেবে তিসির তেল ব্যবহার করার অনেক উপায় রয়েছে। তবে একমাত্র এটি খাবার হিসেবে ব্যবহার করা গেলেও রান্নার কাজে এটি ব্যবহার করা যায় না। কারণ রান্নার কাজে এটি ব্যবহার করা গেলে এর কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এই তেল গরম করলে এর কার্যকারিতা এবং গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়। তাই এটি খাবার রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় না।
আরও পড়ুনঃ তিলের তেলের ১০ উপকারিতা পুষ্টিগুণ ব্যবহার সতর্কতা
তবে এটি বিভিন্ন খাবারের সাথে যুক্ত করে খেতে পারেন। যেমন সালাদের সাথে মিশিয়ে অর্থাৎ কয়েক ফোঁটা দিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়াও মুড়ি, চিড়া বিভিন্ন ধরনের শুকনা খাবারের ওপরে দিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া কোনো ফল মূলের উপরে এই তেল ব্যবহার করে খাওয়া যায়। বিশেষ করে রান্নার কাজে ব্যবহার ছাড়া কাঁচা তেল যেকোনো জিনিসের সাথে খাওয়া যায়।
তিসির তেল খালি মুখেও খাওয়া যায়। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক থেকে দুই চা চামচ তিসির তেল খেতে পারেন। এছাড়াও গরম ভাতের উপর কয়েক ফোটা এই তেল দিয়ে খেতে পারেন, এতে অনেক উপকার মিলবে। তাছাড়া রান্না করা তরকারি অথবা আমিষ জাতীয় খাবার মাছ, ডাল রান্নার পরে তিসির তেল কয়েক ফোঁটা দিয়ে খাওয়া যায়।
চুলের যত্নে তিসির তেলের ব্যবহার
চুলের যত্নে তিসির তেল ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনা যায়। যারা চুলের একটু যত্ন নিতে পছন্দ করেন তারা এই তিসির তেল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এর গুনাগুন অনেক আর এই তেল বর্তমানে খুব কম পাওয়া যায়। চুলের যত্নে মানুষ এখন বিভিন্ন ধরনের তেল ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু যারা একটু অন্যরকম ভাবে চুলের যত্ন করতে চান তারা এই তেল ব্যবহার করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ চুলের যত্নে কালোকেশীর ব্যবহার কেশরাজ পাতার উপকারিতা
যেহেতু তিসির উৎপাদন খুবই কম তাই এই তেল সপ্তাহে এক থেকে দুইবার চুল ব্যবহার করতে পারেন। তবে সারা বছর না করলেও চলবে বিশেষ করে শীতকালে চুলের যত্ন নেওয়া খুব কম হয় ফলে কোলে মাথায় অনেক খুশকি দেখা দেয়। তাই যারা এ ধরনের সমস্যায় আছেন তারা শীতকালে সপ্তাহে ১-২ বার মাথার ত্বকে এই তিসির তেল ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকের যত্নে তিসির তেলের ব্যবহার
ত্বকের যত্নে তিসির তেল খুবই ব্যবহার উপযোগী। ত্বকের যত্ন কমবেশি সকলেই করে থাকেন। কিন্তু অনেকেই ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকেন ফলে বুঝে উঠতে পারেন না কি ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যার থেকে সমাধান পাওয়া যায়। তাই তিসির তেল ত্বকে ব্যবহার করে ত্বকের মলিনতা এবং উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন।
তিসির তেল ত্বকে ব্যবহার করলে এক ধরনের ময়শ্চারাইজারের কাজ করে। যাদের ত্বক রোদে বা এমনিতেই জ্বালাপোড়া করে তারা ত্বকে সরাসরি এই তিসির তেল ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও অনেক ফেসপ্যাক আছে যেগুলোর সাথে এই তেল কয়েক ফোটা মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এই তেল ত্বকের শুষ্কতা,প্রদাহ, একজিমা বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে এটি ব্যবহার করা যায়।
শরীরে ম্যাসাজে তিসির তেলের ব্যবহার
শরীরের ব্যথার উপশম কমাতে তিসির তেল ম্যাসাজ করলে অনেকটাই আরাম অনুভব হয়। তিসির তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অন্যান্য কার্যকরী উপাদান যার ফলে শরীরের কোন অঙ্গ ব্যথা করলে এ তেল মালিশ করার ফলে শরীরের ব্যথা অনেকটা কমে যায়।
পায়ের হাটু, হাতের কব্জি, মাজাতে এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে,পেশীতে ব্যথা হয় তারা প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এই তেল ব্যথাযুক্ত স্থানে মালিশ করতে পারেন ফলে রক্ত চলাচল দ্রুত সঞ্চালন করবে এবং এ ধরনের ব্যথার উপশম অনেকটাই কমে যাবে। তিসির তেল ব্যবহারে ক্লান্তিবোধ এবং শরীরে আরাম অনুভব হবে।
তিসির তেলের উপকারিতা
তিসির তেলের উপকারিতা অবশ্যই রয়েছে যা আমাদের জানা অত্যন্ত জরুরি। কিসের তেলে এমন একটি তেল যা সচরাচর মানুষ দেখেনি বা চেনেনা। কারণ এই তেল বর্তমানে খুব কম ব্যবহৃত হয়। তবে এর উপকারিতা গুলো জানলে হয়তো অনেকেই এটি ব্যবহার করতে পারবেন। চলুন তিসির তেলের উপকারিতা গুলো কি কি সেগুলো জানা যাক।
- এটি রক্তে থাকা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- এই তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকার ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- তিসির তেল রক্তজমাট বাধা প্রতিরোধ করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- শরীরের প্রদাহ জনিত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সাহায্য করে থাকে।
- হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- এই তেল রক্তনালিকে নরম করতে সাহায্য করে।
- এই তেল দ্রুত হার্টবিট কমাতে এবং স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
- প্রোস্টেট, স্তন ক্যান্সার এবং হরমোনাল বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে এই তেল উপকারী।
- তিসির তেল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- তিসির তেলের পুষ্টিকর উপাদান গুলো শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমকে উন্নত করে।
- শরীরে থাকা বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।
- হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
- সুস্থ এবং স্বাভাবিক কোষ গঠনে সহায্য করে।
- মস্তিষ্ক ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
- ত্বকের শুষ্কতা কমাতে এবং ত্বক মসৃণ, সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
- টিউমারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
- ফাইবার থাকার ফলে এটি হজম শক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
- জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
- ত্বকে পিম্পলের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
- চুল দ্রুত লম্বা করতে সাহায্য করে।
- এই তিসির তেল ডায়াবেটিসের সুগারের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
- অ্যাংজাইটির মতো মানসিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
তিসির তেল তৈরি পদ্ধতি
আরও পড়ুনঃ সকালে খালি পেটে রসুন ও মধু খাওয়ার উপকারিতা
এরপর বীজগুলো হালকা আচে ভেজে নিতে হবে। ভেজে নিলে এ বীজ থেকে তেল দ্রুত নিষ্কাশন করা যায় এবং তেলের সুগন্ধি সুন্দর হয়। বীজগুলো ভাজার পরে ঠান্ডা করে নিতে হবে। এরপর বীজগুলোকে গ্রাইন্ডারে অথবা পাটাতে পিশে গুড়ো করে নিতে হবে। গুরু করো সবাই হালকা পানি দিতে হবে। বুড়ো পর পাতলা কাপড়ে ছেঁকে তেল বের করতে হবে।
যদি এভাবে তেল বের করা কষ্ট হয় তাহলে তিসির বীজগুলো হালকা আছে চুলায় দিতে পারেন ফলে এই থেকে তেল বের হবে। তেলগুলো ঠান্ডা হয়ে গেলে ভালো নরম পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এরপর তেল গুলো কাঁচের বোতলে সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। বাইরে রাখলে বেশি দিন ভালো নাও থাকতে পারে, তাই ফ্রিজে রাখলে অনেকদিন পর্যন্ত ভাল থাকে।
তিসির তেলে থাকা পুষ্টি উপাদান সমূহ
তিসির তেলে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি পাতা রয়েছে যা আমাদের শরীর, ত্বক, অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে। এই তেল সংরক্ষণ করে বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যায়। চুলের জন্য, ত্বকের জন্য, শরীরের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। চলুন তিসির তেলে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো নিজে উল্লেখ করা যাক।
কিছু খনিজ উপাদান রয়েছে যেমন পটাশিয়াম
- খনিজ উপাদান জিংক
- খনিজ উপাদান সেলেনিয়াম
- ক্যালোরি
- ফাইবার
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- প্রোটিন
- ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড
- ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড
- ভিটামিন ই
- লিগানানস
২০ মিলি তিসির তেলে আনুমানিক পুষ্টি উপাদান সম্মুহ নিচে উল্লেখ করা হলো।
ক্রমিক নং | উপাদান | পরিমাণ |
---|---|---|
১। | ভিটামিন ই | ৩-৪ মি.গ্রাম |
২। | ওমেগা-৩ | ১০-১২ গ্রাম |
৩। | ওমেগা-৬ | ২-৩ গ্রাম |
৪। | ক্যালোরি | ১৬৬ ক্যালোরি |
৫। | মোট ফ্যাট | ১৮.৫ গ্রাম |
৬। | স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ১.৫ গ্রাম |
৭। | মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ৩ গ্রাম |
৮। | পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট | ১৩-১৪ গ্রাম |
শেষ কথাঃ তিসির তেলের ব্যবহার
তিসির তেলের ব্যবহার উপরিউক্ত আলোচনায় আপনারা জানতে পেরেছেন। তাই যারা শারীরিক মানসিক এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে রক্ষা পেতে চান তারা এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই তেল খাওয়ার চেয়ে চুলে এবং ত্বকেই বেশি ব্যবহার করা হয়। যাদের চুল অনেক শুষ্ক তারা এটি অন্যান্য তেলের সাথে যুক্ত করে বা বিভিন্ন প্যাকের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
অবশেষে আমরা বলতে পারি দেশের তেল ব্যবহার উপযোগী একটি তেল। তেলের উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণও রয়েছে তাই এ তিসির তেল ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ রোগব্যাধি থেকে রক্ষা পেতে পারি তাই পরিমাণে কম করে হলেও এই তেল ব্যবহার করা উচিত। এ ধরনের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কিত পোস্টগুলো আরো রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করে আসতে পারেন ধন্যবাদ
টেকিসময় ডট কম ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url