কলার খোসার ব্যবহার ১০ টি কার্যকরী ব্যবহার

কলার খোসার ব্যবহার করার কথা শুনলে অনেকেই অবাক হবেন কারণ অধিকাংশ মানুষই জানে না কলার খোসা কিভাবে ব্যবহার করা যায়। সাধারণত কলার ভেতরের অংশটুকু নিয়ে বা খেয়ে বাইরের অংশ অর্থাৎ  খোসা আমরা ফেলে দিয়ে থাকি।

কলার-খোসার-ব্যবহার

কলার খোসা আমরা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করতে পারি। কলার খোসা পরিবেশের জন্য সার হিসেবে এবং দৈনন্দিন জীবনেও বিভিন্ন কাজ আমরা ব্যবহার করতে পারি চলুন কলার খোসার কিছু কার্যকরী ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। 

পোস্ট সূচিপত্রঃ কলার খোসার কার্যকরী ব্যবহার 

কলার খোসার ব্যবহার

কলার খোসার ব্যবহার অনেকেই জানেনা বেশিরভাগ মানুষ কলা খেয়ে কলার খোসা ফেলে দেয়। কিন্তু পারিবারিক এবং দৈনন্দিন জীবনে কলার খোসা বিভিন্ন উপকারে আসে। চলুন কি কি কাজে কলার খোসা ব্যবহার করতে পারি।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে পেটের চর্বি কমানো যায় সহজ ১০ টি উপায়

  • কাঁচা কলা সিদ্ধ করে খোসা ফেলে না দিয়ে খোসাসহ সিলপাটাতে পিষে ভর্তা করে  করে খাওয়া যায়।
  • কলার কোপ্তা বানিয়েও খাওয়া যায়।
  • দাঁত পরিষ্কার করতে উজ্জ্বল চকচকে দাঁত করতে কলার খোসা ব্যবহার করা হয়। 
  • কলার খোসা জমিতে সার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। 
  • কলার খোসা আমাদের গৃহপালিত পশু যেমন ছাগল, মহিষ, গরু এদের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
  • বানর এবং শিম্পাঞ্জির প্রিয় খাবার কলা এবং কলার খোসা
  • কলার খোসা সিদ্ধ করে শিলপাটাতে পিষে ডালের সাথে মিশিয়ে মুখরোচক পকোড়া বানিয়ে খাওয়া যায়।
  • কলা খোসা সহ রান্না করে খাওয়া যায়। মাছের সাথে অথবা অন্যান্য সবজির সাথে ঝোল বানিয়ে খাওয়া যায়।

কলার খোসায় যে সকল পুষ্টিগুণ থাকে 

কলার খোসায় যে সকল পুষ্টিগুণ থাকে তা আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন। কারণ যে জিনিসটা আমরা আবর্জনা হিসেবে ফেলে দিই সেটা এত উপকারী বলে বোঝানো যাবে না। চলুন কি কি পুষ্টিগুণ আছে দেখে নেয়া যাক। 

  • আয়রন 
  • ক্যালসিয়াম
  • সালফার 
  • পটাশিয়াম 
  • কার্বোহাইড্রেট 
  • ভিটামিন এ 
  • ফাইবার 
  • ম্যাগনেসিয়াম 
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট 
  • ভিটামিন সি 
  • পটাশিয়াম 
  • ভিটামিন বি ৬

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কলার খোসা ব্যবহার 

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে কলার খোসা কার্যকরী ব্যবহার সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো। ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে কলার খোসার কার্যকারিতা অনেক।

কলার-খোসার-ব্যবহার

  • কলার খোসার ভিতরের নরম অংশ দিয়ে অংশটুকু ত্বকে ঘষলে মুখের বিভিন্ন ধরনের কালো দাগ ব্রণের দাগ ইত্যাদি দূর করা যায়। 
  • কলার খোসার ভিতরের অংশ দিয়ে ত্বকে ঘসলে ত্বক সুন্দর এবং মসৃণ, নরম হয়। 
  • চোখের নিচের কালো দাগ দূর হয় কলার খোসা ভিতরে অংশ ভালোভাবে চোখের নিচে ঘষলে। 
  • কলার খোসাতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল পাওয়ার থাকার ফলে মুখের বিভিন্ন ধরনের এবং রোদে পোড়া দাগ দূর করা যায়। 
  • কলার খোসার ভেতরের অংশ চোখের নিচে লাগিয়ে রাখলে চোখের চারপাশের ফোলা কমাতে সাহায্য করে। ফোলা ভাব দূর করে। 
  • কলার খোসার ভিতরে অংশ বের করে এর সাথে হালকা মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে রাখুন তারপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখার পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। 

দাঁত পরিষ্কার করতে কলার খোসা ব্যবহার 

দাঁত পরিষ্কার করতে কলার খোসার ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলার খোসা দিয়ে কি ধরনের কাজ করা যায় মানুষ না জানলেও তবে কলার  খসা দিয়ে যে দাঁত পরিষ্কার করা যায় সেটা অনেকেই জানে।

  • সব ধরনের কলার খোসা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা যায় কলার ভিতরের অংশ দাঁতে ঘষলে দাঁতের কালো দাগ দূর হয়।
  • কলার খোসা দাঁতে ঘষলে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বা ফোলা ভাব দূর হয়। 
  • অনেকের পান অথবা সিগারেট খাওয়ার ফলে দাঁতের ভিতরে অনেক কালো কালো দাগ পড়ে যায়। যদি নিয়মিত কলার খোসা দিয়ে দাঁত ঘষেন তাহলে সেই সব দাগ দূর হয়ে যায়। 
  • বিশেষ করে পাকা কলার খোসার ভেতরের অংশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে দাঁতের প্লাগ এবং কালো দাগ দূর করা যায়।

বিভিন্ন উদ্ভিদের জন্য প্রাকৃতিক সার হিসেবে 

বিভিন্ন উদ্ভিদের জন্য প্রাকৃতিক শাড়ি হিসেবে কলার খোসা ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ আমরা বেশিরভাগই কলা খেয়ে তার খোসাটা ফেলে দেই কিন্তু যদি ফেলে না দিয়ে একসাথে অনেকগুলো কলার খোসা এক জায়গাতে রাখা হয় তাহলে সেগুলো পরবর্তীতে জমিতে অথবা গাছের সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। 

আরোপড়ুনঃ পাকা টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও এর কার্যকরী পুষ্টিগুণ সম্পর্কিত

কলার খোসা গাছের বৃদ্ধিতে এবং গাছের পরিবর্তনে ও মাটির গুনাগুন রক্ষা করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কলার খোসা যেহেতু খুব দ্রুত পচে যায় সেহেতু এটি মাটির সাথে দ্রুত মিশে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং সার হিসেবে উদ্ভিদের বর্ধনে সাহায্য করে। কলার খোসা আপনি যে কোন গাছে সার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কলার খোসার মধ্যে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকায় এটি দ্রুত গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে কলার খোসা ব্যবহার 

পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে করার খোসার ব্যবহার। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কলা খাওয়ার পরে সে খোসা ফেলে না দিয়ে ঘরের কোন এক কোণে রেখে দিলে বা রান্না ঘরের কোন এক কোণে রেখে দিলে পিঁপড়া, মাকড়সা, মশা, মাছি ইত্যাদি দূর করা যায়। কলার খোসা পোকামাকড় তাড়াতে সহযোগিতা করে। 

কলার খোসার ভিতরে কিছু রাসায়নিক সার ও উপাদান থাকে যা পোকামাকড় কে আশেপাশে আসতে বাধা দেয়। তাছাড়া পিপড়া, মশা, মাছি এসব কিছু আমাদের খাবারে দেখা যায়। অনেক সময় আমাদের খাবার নষ্ট হয়ে যায়। তাই কলার খোসা খাবারের আশেপাশে বা রান্নাঘরের আশেপাশে রেখে দিলে এ সকল কিছু আসতে বাধা দেয়। 

পশুদের খাবার হিসেবে কলার খোসার ব্যবহার 

অনেক সময় আমাদের বাড়িতে গৃহপালিত পরশু যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ ইত্যাদি থাকে। আমরা কলার খোসা ফেলে না দিয়ে এ সকল পশুপাখির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারি। তাছাড়া কলার খোসা পশু পাখির খাবারের জন্য খুবই উপকারী। গরু ছাগল ভেড়া ইত্যাদি পশু ু কলার খোসা খুব তৃপ্তি সহকারে খাই তাদের পছন্দের একটি খাবার কলার খোসা বা কলা। 

আরো পড়ুনঃ প্রতিদিন ধনেপাতা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা ১৫ টি তালিকা

অনেক সময় বাসা বাড়িতে পাখি পালন করা হয়। অনেক পাখি আছে যারা কলা খেতে পছন্দ করে। তাদের খাবার হিসেবেও কলার খোশাকে ব্যবহার করা যায়। অনেক সময় আমাদের গৃহপালিত পশুদের ঔষধ, ভিটামিন খাওয়াতে হয়। কিন্তু তারা এমনি এমনি সেই ওষুধগুলো খায় না তখন এই কলার খোসার ভেতরে ওষুধ নিয়ে তাদেরকে খুব সহজেই খাওয়ানো যায়।

ঘরের জিনিসপত্র পরিষ্কার এবং পলিশে 

কলার খোসা দিয়ে চামড়া তৈরি জুতা ব্যাগ বিভিন্ন ধরনের জিনিস পরিষ্কার করা যায়। অর্থাৎ কলার খোসা দিয়ে চামড়ার জুতা ঘষলে এর মধ্যে থাকা পটাশিয়াম চামড়াকে নরম এবং পলিশ/চকচকে করতে সাহায্য করে।

মেটালের তৈরি জিনিসপত্র কলার খোসা দিয়ে পরিষ্কার করলে অতি সহজেই এবং সুন্দরভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়।

অন্যান্য কাজে কলার খোসার ব্যবহার 

অন্যান্য আরো বিভিন্ন কাজে কলার খোসা ব্যবহার করা যায়। চলুন আর কি কি কাজে করার খোসা ব্যবহার করা যায় দেখা যাক। 

কলার-খোসার-ব্যবহার

  • পোকামাকড় কামড়ালে সে জায়গাতে কলার খোসা চেপে ধরলে যন্ত্রণা অনেকাংশ কমে যায়। 
  • ত্বকের বলিরেখা দূর করে। 
  • কলার খোসা দিয়ে রসুন পেঁয়াজ মরিচ একসাথে ভর্তা করে খাওয়া যায়। 
  • কলার খোসা দিয়ে মুখ ত্বক ফর্সা করা যায়। 
  • কলার খোসা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার ।
  • চুলের যত্নে কলার খোসা ব্যবহার করা হয়। 
  • কলার খোসা দিয়ে রূপচর্চা করা যায়। 
  • দাউদের ওষুধ হিসেবে কলার খোসা ব্যবহার করা হয়।
  • খোস পাঁচড়া দূর করতে কলার খোসা ব্যবহার।
  • পেশির ব্যথা অথবা অ্যাথলেটিক পেন কমাতে কলার ভ খোসা ব্যবহার। 
  • কলার খোসার ব্যবহারে গ্যাস বা এসিডিটি অথবা হজম জনিত সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। 
  • জৈব সার হিসেবে কলার খোসা ব্যবহার। 
  • ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে কলার খোসা ব্যবহার। 

শেষ কথাঃ কলার খোসা ব্যবহার সম্পর্কিত 

কলার খোসা আসলে বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার করা যায় যদি এর উপযুক্ত কার্যকারিতা সম্পর্কে আপনি জেনে থাকেন তাহলে অবশ্যই এর ব্যবহার সম্পর্কে আপনি সচেতন হবেন। কলার খোসা ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে এলার্জিজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে তবে সচেতন থেকে ব্যবহার করতে পারেন। 

আশা করি আজকে কলার খোসার ব্যবহার সম্পর্কে আপনারা একটু হলেও কিছুটা ধারণা অর্জন করতে পেরেছেন। যদি কলার খোসা ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং এ ধরনের পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টেকিসময় ডট কম ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url