প্রতিদিন কয়টা আমলকি খাওয়া উচিত

আমলকি একধরনের ফল যা দেখতে অনেকটা আঙ্গুর ফলের মতো। এটি সুন্দর এবং গোল আকারের হয়। এটি দেখতে যেমন সুন্দর এর গুনাগুন ও অনেক। প্রতিদিন আমলকি খেলে শরীরের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আসুন আমলকি ফল  সম্পর্কে জেনে নিন।

প্রতিদিন-কয়টা-আমলকি-খাওয়া-উচিত

কিন্তু এর উপকারিতা শুনলে আপনারা খেতে বাধ্য হবেন। আমলকি অনেকের কাছে আমলা নামে পরিচিত। আমলকি একটি ভিটামিন সি যুক্ত ফল। ভিটামিন সি এর পরিমাণ অন্যান্য যে সকল ভিটামিন সি যুক্ত ফল আছে তার চাইতে অনেক গুণ বেশি। 

সূচিপত্রঃ প্রতিদিন আমলকি ফল খাওয়া

প্রতিদিন যে পরিমাণ আমলকি খাওয়া উচিত 

আমলকি কেন খাবেন কি উপকারিতা আছে আমলকি তে? এ ধরনের প্রশ্ন আপনাদের মনে আসতে পারে তাই না? আমলকি এমন এক ধরনের ফল যেটা ছোট কিন্তু এর  গুনাগুন অনেক বড়। অনেকেই আপনারা আমলকি পছন্দ করেন না কারণ এটি খেতে খুব একটা যে সুস্বাদু তা কিন্তু নয় তবে যে জিনিসটা সুস্বাদু না হলেও তার উপকারিতা অধিক।

একটা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কি পরিমান আমলকি খাওয়া উচিত অবশ্যই আমাদের জানা উচিত। হ্যাঁ আমলকি যেহেতু অন্যান্য সব ফলের চাইতে বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। তাই প্রতিদিন দুইটা(২) করে আমলকি খেলে প্রতিদিনের ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হয়। ভিটামিন সি এর অভাবের ফলে আমাদের মুখে ঠোঁটে ঘা হয় আরো অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। 

তবে প্রতিদিন ভিটামিন সি যুক্ত ফল অর্থাৎ আমলকি খেলে সে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়। আপনারা কিন্তু প্রতিদিন কোন না কোন ফল খেয়ে থাকেন কিন্তু আপনারা জানেন না যে সেই ধরনের  ফলে  কি আছে কেন আমরা খাচ্ছি? বেশি দাম দিয়ে আপেল কমলা আঙ্গুর এবং ইত্যাদি ফল খাওয়াচ্ছে তার অর্ধেক দামে এই আমলকি পাওয়া যায়। দিনে দুইটা করে আমলকি খেলে যথেষ্ট। 

প্রতিদিন আমলকি খেলে যে সকল পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায় 

আমরা আগেই জেনেছি আমলকি একটি ভিটামিন সি যুক্ত ফল। তবে শুধু জি ভিটামিন সি আছে তা নয় ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ও থাকে। তাছাড়া এ ফলটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় ফল। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা আরো অন্যান্য রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

প্রতিদিন-কয়টা-আমলকি-খাওয়া-উচিত

একটা পেয়ারা বা লেবু অথবা আপেলে যে পরিমাণ ভিটামিন সি থাকে তাদের থেকে তিনগুণ পরিমাণ ভিটামিন সি এই আমলকিতে আছে। কিন্তু আমরা এই ফল দেখলে কেউ বুঝতে পারব না যে এটি এত উপকারী একটি ফল। কারণ দেখতে অনেক ছোট একটা আঙ্গুরের থেকেও অনেক সময় ছোট হয়ে থাকে। তবে দেখতে ছোট হলেও এর গুন অনেক বেশি। 

আরো পড়ুন ঃ পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

প্রতিদিন যদি আপনি অন্যান্য সকল ফল বাদ দিয়ে দুইটা করে আমলকি খান তাহলে অন্যান্য সকল ফলের চেয়ে অধিক  পুষ্টি পাওয়া যায় । আমলকিতে সামান্য পরিমাণ ফাইবার ও থাকে। তবে ভিটামিন সি এর জন্য বিশেষ করে আমলকি  পরিচিত। 

প্রতিদিন খালি পেটে আমলকি খাওয়া 

প্রতিদিন নিয়ম করে সকালে খালি পেটে আমলকি খেলে কি পরিমাণ উপকারিতা আছে তা আমাদের ধারনার বাইরে। যেহেতু আমরা বলেছি প্রতিদিন দুইটা করে আমলকি খেলে আমাদের শরীরের জন্য যথেষ্ট। তবে কখন খাওয়া সবচাইতে ভালো এটা আপনার অবশ্যই জানেন না। প্রতিদিন সকালে যদি আপনি দুইটা করে আমলকি খান তাহলে সারাদিনের পুষ্টির অভাব পূরণ হয়। 

তবে অনেকে খালি পেটে আমলকি খেতে পারে না তবে চলুন দেখা যাক কিভাবে আমলকি  খেলে আপনি এই পুষ্টিগুন গ্রহন করতে পারবেন। আপনি সকালে খালি পেটে, আমলকি চিবিয়ে খেতে পারলে সবচাইতে ভালো তবে যদি না পারেন তাহলে আমলকি রস করে অল্প পরিমাণ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। কাঁচা আমলকি চিবিয়ে খাওয়ার পর যদি আপনি পানি পান করেন তাহলে আপনার মুখ মিষ্টি হয়ে থাকবে।

আমলকি যেহেতু একটু কষ্টা  জাতীয় ফল তবে খাওয়ার পর যদি আপনি পানি পান করেন তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কতটা সুস্বাদু। তাছাড়া যারা কাজ আমলকি খেতে পারেন না তারা আমলকি শুকিয়ে গুড়া করে রেখে দিতে পারেন। প্রতিদিন সকালে এক কাপ পানির সাথে পরিমাণ মতো আমলকি গুরো ও সামান্য পরিমাণ লবণ এবং মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

প্রতিদিনের চুলের যত্নে আমলকির উপকারিতা 

আমাদের শরীরে যেমন ভিটামিন সি এর অভাব থাকে তেমনি আমাদের ত্বক, চুল ও ভিটামিন সি এর অভাব হয়। তাই চুলের যত্নে আমলকির কোন বিকল্প নাই। বিভিন্ন কারণে আমাদের চুল উঠে যায় চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে আপনারা আমলকি বেছে নিতে পারেন। যাদের অকালে চুল পড়ে যায় এবং চুল ফেটে যায় এবং চুলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় তাদের জন্য আমলকি একটি সমাধান। 

আমলকি খেলে শুধু শরীরের ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণ হয় না এটি চুলেরও ভিটামিন ধরে রাখতে সহায়তা করে। তাছাড়া আমলকি ব্লেন্ড করে মাথার ত্বকের লাগাতে পারেন। মেহেদি পাতা গুড়া করে এর সাথে আমলকি বুড়া মিক্সড করে পেস্ট বানিয়ে চুলের ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ডাক্তার পারেন। তারপরে এক থেকে দুই ঘন্টা লাগানোর পরে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলে দেবেন। 

তাছাড়া আমলকি অনেকদিন পর্যন্ত রেখে দিতে চাইলে প্রথমে কিছু আমলকি নিয়ে সেগুলো রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিন । এরপর এই শুকনো আমলকি আপনার সুবিধামতো ব্লেন্ডার অথবা শিল্পাটাতে গুড়ো করে নিতে পারেন। বায়ুমুক্ত কোন কাঁচের পাত্রে অথবা প্লাস্টিকের পাত্রে অনেকদিন ধরে সংরক্ষণ করতে পারেন।

প্রতিদিন-কয়টা-আমলকি-খাওয়া-উচিত

সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন এই আমলকি গুড়া পানি সাথে এবং মেহেদি পাতা, মেথি গুড়া ইত্যাদির সাথে মিক্সড করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে দিতে পারেন। এভাবে ব্যবহারের ফলে আপনার চুল পড়া অনেকটাই কমে যাবে এবং চুল অনেক সুন্দর মসৃণ, ও সিলকি হবে। তাছাড়া এভাবে ব্যবহার করলে অকালে চুল পেকে যাওয়া থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। 

প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি 

আমলকি যে একটা ভিটামিন সি যুক্ত উপকারি ফল যারা প্রতিদিন এ ফল খেয়ে থাকেন তারা অবশ্যই উপলব্ধি করতে পারবেন। আমলকি শুধু এক ধরনের বা দুই ধরনের সমস্যার সমাধান করে না এটিো(all in all). চলুন দেখে নেয়া যাক আমলকি খাওয়ার ফলে কি কি সমস্যা সমাধান হয়। 

  • উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিয়ন্ত্রণ পাওয়া যায়। 
  • খাদ্য হজমের সহায়তা করে ।
  • মাথার ব্রেন বৃদ্ধি করে ।
  • চুল পড়া বন্ধ করে। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। 
  • ত্বকের ব্রণের দাগ বিভিন্ন ছপ ছপ দাগ দূর করে। 
  • বয়সের ছাপ দূর করে। 
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। 
  • স্বল্প পরিমাণ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। 
  • মুখে খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে। 
  • পেটের কমাতে সাহায্য করে। 
  • যৌবন ধরে রাখতে সহায়তা করে। 
  • সেক্স জনিত বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে।
  • অতিরিক্ত ব্লাড প্রেসার কমায়।
  • ঠোঁটে, মুখে, জিহ্বায় ঘা থেকে রক্ষা করে।
  • মাড়ি ফুলে যাওয়া মাড়ি থেকে রক্তপড়া পুজ পড়া বন্ধ করে।
  • মাথা ব্যথা কমায়। 
  • চেহারার সৌন্দর্য ধরে রাখতে সহায়তা করে। 
  • চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 
  • প্রসবের জ্বালাপোড়া কমায়।

প্রতিদিন অধিক পরিমাণ আমলকি খাওয়ার ফলে ক্ষতিকর দিক 

আমরা এ পর্যন্ত জেনে এসেছি প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার ফলে আমাদের কি কি সমস্যা সমাধান হয়। তবে আমলকি খাওয়ার ফলে যেমন সমস্যার সমাধান হয় এর ক্ষতিকারক কিছু দিক ও রয়েছে। অধিক পরিমাণ আমলকি খাওয়ার ফলে পেটে বদহজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের গ্যাসের সমস্যা আছে আমলকি খাওয়ার ফলে গ্যাস সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। 

অনেক ক্ষেত্রে আমলকি খাওয়ার ফলে এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যাদের অ্যালার্জিজনিত প্রবলেম আছে তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বা সাবধানতা অবলম্বন করে আমলকি খেতে পারেন। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাইলসের সমস্যা আছে তারা আমলকি একটু সাবধানতা অবলম্বন করে খাবেন। কারণ আমল লোকের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত সমস্যা বেশি হয়ে যেতে পারে। 

যেহেতু আমলকৃত অধিক পরিমাণ ভিটামিন সি আছে সেহেতু অধিক খাওয়ার ফলে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাছাড়া যারা গর্ভবতী প্রসূতি মহিলা আছে তাদের জন্য আমলকি উপকার, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তাদের খাওয়া উচিত। গর্ভবতী মহিলারা কখন আমলকি খাবেন কত মাসে বা কোন সময়ে এ ধরনের সমস্যায় ভুগলে তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

লেখক এর শেষ কথাঃ প্রতিদিন আমলকি খাওয়া 

আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার ফলে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই আর্টিকেলে প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার ফলে যে সকল সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায় সবগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আপনারা এরকম নিয়ম মেনে প্রতিদিন আমলকি খেতে পারেন। 

আশা করছি আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। যদি সামান্য পরিমাণ উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই এরকম আর্টিকেল আমাদের আরো পোস্ট করা আছে আপনারা আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে দেখে নিতে পারেন। আর্টিকেলটি পড়ার জন্য এবং আমাদের সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

টেকিসময় ডট কম ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url